{getBlock} $results={3} $label={ফিচার} $type={headermagazine}

তাসনিম জারাকে নিয়ে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি, ভুয়া বিজ্ঞাপন: নেপথ্যে কারা?

প্রকাশঃ
অ+ অ-
✅ Link copied to clipboard!


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারাকে লক্ষ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব ও রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এসব অপপ্রচারের বড় অংশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৬২টি পোস্ট বিশ্লেষণ করে ডিসমিসল্যাব। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি এসেছে আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকদের ফেসবুক প্রোফাইল ও পেজ থেকে। এসব পোস্টে ভুয়া ছবি, মূলধারার গণমাধ্যমের আদলে বানানো বিভ্রান্তিকর ফটোকার্ড, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–নির্মিত ভিডিও ও অডিও ব্যবহার করে তাসনিম জারাকে টার্গেট করা হয়েছে।

অধিকাংশ পোস্টের ভাষা ছিল আক্রমণাত্মক, অবমাননাকর ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ। এমনকি কিছু পোস্টে তাসনিম জারার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে যৌনবাহিত রোগের ওষুধের ভুয়া বিজ্ঞাপনে। এইসব কনটেন্ট ২৯ হাজার ৬৯৩ বার শেয়ার, ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৯০০ বার ভিউ এবং ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৩৪টি প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। মন্তব্য এসেছে প্রায় ৩৫ হাজার, যার বেশিরভাগই ছিল যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ও কটূক্তিমূলক।

ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, অপপ্রচার চালানো ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন মো. সাইফুল ইসলাম নামের একজন, যিনি নিজেকে ‘জয় বাংলার সৈনিক’ হিসেবে পরিচয় দেন এবং কভার ফটোতে বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করেন। তিনি একাই ২০টি ছবি শেয়ার করেন, যার মধ্যে ১৮টি বিকৃত।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ–সংলগ্ন বিভিন্ন পেজ যেমন ‘আওয়ামী লীগ ২৩’, ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ’, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী মুজিবাবাদী লীগ’ এবং স্বঘোষিত ‘মুজিব সৈনিক’ নামের একাধিক পেজ থেকে তাসনিম জারার বিকৃত ছবি ও ভিডিও ছড়ানো হয়েছে। এসবের মধ্যে ব্যঙ্গাত্মক পেজও ছিল, আবার কিছু পেজ নিজেদের সংবাদমাধ্যম হিসেবে দাবি করেছে।

আরেকটি বড় অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তাসনিম জারার একটি হাফ প্যান্ট পরিহিত ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। রিউমর স্ক্যানার টিমের যাচাইয়ে দেখা গেছে, ছবিটি আসল নয়। প্রকৃত ছবিটি ছিল ফুল প্যান্ট পরিহিত অবস্থায়, কিন্তু সেটিকে এআই প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে হাফ প্যান্ট পরা ছবি বানানো হয়েছে। ছবিটি প্রথম ছড়ায় ‘Fariha Nishat’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে, যেখানে মূল ছবিও পোস্ট করা হয়েছিল। ভাইরাল ছবিতে হাতের আঙুল ও পটভূমি বিকৃত হওয়ার বিষয়টি এআই–সংশোধনের প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

ডিসমিসল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, এসব অপপ্রচার ছড়ানোর পেছনে ৬২টি পেজ ও প্রোফাইল জড়িত, যা পরিচালনা করছিলেন ১৩৩ জন অ্যাডমিন। এর মধ্যে ১০২ জন বাংলাদেশে, বাকিরা মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পর্তুগালে অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে তাসনিম জারা বলেছেন,

“আমাকে কীভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। তবে এ অভিজ্ঞতা শুধু আমার নয়, রাজনীতিতে সম্পৃক্ত প্রায় সব নারীই এর মুখোমুখি হন। এটা রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ কম থাকার একটি প্রধান কারণ।”

তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে কোনো ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে ভুয়া বিজ্ঞাপন চালানো প্ল্যাটফর্মটির নিজস্ব নীতিমালারও লঙ্ঘন। কিন্তু ফেসবুক দায় এড়িয়ে যায়, কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এ বিষয়ে সরকারের উচিত টেক কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা।

সবশেষে তিনি দলমত–নির্বিশেষে নারীর বিরুদ্ধে অনলাইন সহিংসতা বন্ধে একটি সাধারণ আচরণবিধি প্রণয়ন এবং দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করার ব্যবস্থা নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

সার্বিকভাবে এ অনুসন্ধান ইঙ্গিত দিচ্ছে, অনলাইন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন ভুয়া কনটেন্ট, এআই–নির্মিত ছবি ও ভিডিও এবং অপপ্রচারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণে পরিণত হচ্ছে, যার সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছেন রাজনীতিতে যুক্ত নারীরা।


একটি মন্তব্য করুন

💬 মন্তব্যের নিয়মাবলি:
- ভদ্র ও শালীন ভাষায় মন্তব্য করুন।
- স্প্যাম, বিজ্ঞাপন বা অপ্রাসঙ্গিক লিংক দেওয়া যাবে না।
- অশালীন বা আক্রমণাত্মক মন্তব্য মুছে ফেলা হবে।
- প্রতিটি মন্তব্য যাচাইয়ের পর প্রকাশ করা হয়।
- মন্তব্যটি অনুমোদনের পর প্রদর্শিত হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন